বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[রাজ্য]

[রাজ্য]

শ্রমজীবীর আখ্যান

শ্রমজীবীর আখ্যান

তাপস দাস

photo

শ্রমজীবী ভাষা, ১৬ অগাস্ট, ২০২১— গৌড় দেবনাথ একজন দিনমজুর। তাঁর বয়স এখন ৬০ বছরের বেশি। থাকেন সোদপুরে। নিজের ঘর— বেড়ার, উপরে টালি। পরিবারের সদস্য চার— স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে। লকডাউন তাঁর দীর্ঘ জীবনে এক নতুন অভিজ্ঞতা। ছোটবেলা থেকে দেখেছি, কখনও কাজ খুঁজে পেতে তাঁর অসুবিধা হয়নি, পুরোনো শ্রমিক হিসেবে কাজ পেয়ে যেতেন। মোটামুটি চলে যেত খেয়ে পড়ে। কিন্তু এখন লকডাউনের বাজারে পরের দিন কি খা্বেন তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একদিন কাজ না পেলে পরের দিন খাবার জুটছে না। একদম জুটছে না, বলা ভুল, এক বেলা ভাত আর এক বেলা মুড়ি-জল।

তাঁর ছেলে বিয়েবাড়ির সাজসরঞ্জামের কাজ করেন— অতিমারিতে লকডাউনের কারণে তাঁরও কাজ নেই। প্রথম যেদিন লকডাউন ঘোষণা করা হল, ভেবেছিলেন, এক সপ্তাহ কোনওভাবে কাটিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু লকডাউন ক্রমাগত বাড়তে থাকল। তাঁদের পারিবারিক জীবনে নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হতে লাগলো। রান্নার গ্যাস আর কিনতে পারেনি, মাটির উনুনে রান্না করছেন কাকিমা। এপ্রিল থেকে সরকার রেশন দেওয়া শুরু করলো। রেশনে তাঁরা পান মাত্র ৫ কেজি চাল, হাজার অনুরোধ সত্ত্বেও এক কেজি চালও অতিরিক্ত পাননি। এলাকার সব রাজনৈতিক কর্মীই কিন্তু তাঁদের সমস্যা জানেন, তাও সুরাহা হয়নি।

দিনে দিনে তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। পরিবারটি দারিদ্র, বরাবর শান্তশিষ্ট। কিন্তু এখন পারিবারিক অশান্তি বেড়েই চলেছে। ছেলে বিকল্প কাজ খোঁজার চেষ্টা করছেন। যদি বা কাজের কোনও খোঁজ পেয়েছেন যে তা এত দূরে যে সরকারি বাধানিষেধ ভেঙে যাওয়া সম্ভব নয়।

গৌড় বাবুর মেয়ে বিয়ের যুগ্যি। ত্রিশ পার হয়ে গেছে। বিয়ের কথা চলছিল কিন্তু লকডাউনে সে কথা বেশি দূর এগোয়নি। লকডাউন কিছুটা শিথিল হলেও উপার্জনের স্থিরতা না আসা পর্যন্ত বিয়ের ব্যাপারে এগোতে চাইছেন না। লকডাউনে এই পরিবারটি আর্থিক শারীরিক মানসিক সব দিক থেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

রাত থাকতে হাসপাতালে লাইন দিয়েছেন ভ্যাকসিনের নেওয়ার জন্য। ভ্যাকসিন নেওয়া আর হয়ে ওঠেনি। হাসপাতালে ভ্যাকসিন শেষ। অথচ ভ্যাকসিন না দেওয়া থাকলে কাজ পাওয়া মুস্কিল। স্বাধীনতার ৭৫-এ দিনমজুর গৌড় দেবনাথ আজ কাজের অধিকার, খাদ্যের অধিকার, সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে কার্যত বঞ্চিত।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.