বামপন্থা ও গণতন্ত্রের কথোপকথন

[রাজ্য]

[রাজ্য]

শ্রমজীবীর আখ্যান

শ্রমজীবীর আখ্যান

তাপস দাস

photo

শ্রমজীবী ভাষা, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১— ছায়া মাল একজন গৃহস্থালীর সেবিকা। তিনি মধ্য হাওড়া গনেশ মাঝি লেনের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী কঠিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েও একটি কারখানায় মাল বহনের কাজ করতেন। ছায়া দেবী সাতটি বাড়িতে ঠিকা কাজ করে তাঁর জীবিকা নির্বাহ করতেন। মাসিক আয় ছিল প্রায় ৮০০০ টাকা। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর তাঁর স্বামীর চাকরী চলে যায়; অন্যদিকে তিনি যে বাড়িগুলিতে কাজ করতেন সেখানেও কাজে যেতে নিষেধ করে দেওয়। হয়।কারখানা থেকে তাঁর স্বামীকে বলা হয়েছিল অসুস্থতার জন্য কিছু আর্থিক সাহায্য দেবে। কিন্তু ছায়াদেবী বা তাঁর স্বামী কারখানার মালিকের কাছ থেকে কোনও টাকাই পাননি। এই ভাবে তাঁদের পরিবার কর্মহীন অবস্থায় কাটান প্রায় দু’ মাসের বেশি। লকডাউনের সময় ছায়া দেবীকে দুটি বাড়ি ছাড়া পুরো মাইনে কোনও বাড়ি দেয়নি। তিনটি বাড়ি তাঁকে অর্ধেক মাইনে দিয়েছে। তিনটি বাড়ি তাঁকে আর কাজে ফেরায় নি। যে তিনটে বাড়ি তাঁকে কাজে যেতে নিষেধ করে দেয় তাঁর মধ্যে একটি বাড়িতে তিনি সর্বোচ্চ টাকা আয় করতেন। কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ার আগে তাঁকে জানানোও হয়নি। খাদ্য ও ওষুধের অভাবে গত বছরের শেষের দিকে তাঁর স্বামী মারা যান। আজ ছায়াদেবী যে শুধু আর্থিক কষ্টের মধ্যে আছেন তাই নয়, তিনি মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েছেন। যে মানুষটিকে একসময় সারা পাড়ায় ছোটাছুটি করে এই বাড়ি ওই বাড়ি কাজ করতে দেখেছি, লকডাউন তাঁর জীবনের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে।

নন্দাদেবীও ছায়া দেবীর মতো একজন গৃহস্থালীর সেবিকা। তিনি মানিকতলা বাজার এলাকার বাসিন্দা। তাঁর পরিবারে চার জন মানুষ। তিনি, স্বামী ও দুই সন্তান। লকডাউনের কারণে তাঁর স্বামীর আয়ে ভাঁটা পড়ে। তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন, তাঁকে পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়তে হয়েছিল। এই সময় বেঁচে থাকার জন্য তিনি পাড়ায় পাড়ায় মাছ বিক্রি করার পেশা বেছে নেন। নন্দাদেবী যে বাড়িগুলিতে কাজ করতেন সেখানে কাজ স্থগিত করে রাখে। নন্দাদেবীর কাজ স্থগিত হলেও লকডাউন কিছুটা শিথিল হওয়ার পর তিনি তাঁর কাজের ডাক পান। কিন্তু লকডাউনের কারণে তিনি যে দিনগুলি কাজে যেতে পারেননি তাঁর মাইনে তিনি পাননি। দুই সন্তানকে অতিমারির সময় প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী ও পর্যাপ্ত খাবার না দিতে পারায় নন্দাদেবী তাঁর আক্ষেপ কিছুতেই যায় না। ভ্যাকসিন দিতে না পারায় তাঁর স্বামী এখনো রাজমিস্ত্রীর কাজে ফিরতে পারেননি। দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বর্তমানে তাঁরা ভীষণ চিন্তিত ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

Copyright © 2021 - 2022 Shramajeebee Bhasha. All Rights Reserved.